May 2, 2024, 7:08 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
আশুলিয়ায় ডিবি পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার, দুই ডাকাতসহ ৫ জন গ্রেফতার মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে, আট প্রার্থীর মানোনয়ন পত্র জমা গরমে তরুণ তরুণীদের শরবত, ঠান্ডা পানি বিতরণ সুজানগরে লাগসই প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সম্প্রসারণে সেমিনার ও প্রদর্শনী পাইকগাছায় মহান মে দিবস পালিত পাইকগাছায় স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা ; ধর্ষক গ্রেপ্তার পাইকগাছা পৌরসভার পক্ষ থেকে তৃষ্ণার্ত পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ;উত্তাপ কমাতে পানি দেওয়া হয় সড়কে পাইকগাছায় আধা কেজি গাঁজাসহ যুবক আটক হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ৪ জনই গলাচিপার প্রতিবন্দ্বী ফজর পেল দোকান করার মালামাল
গোদাগাড়ীর মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুল, এ যেন প্রকৃতির হলুদে বিছানার চাদর

গোদাগাড়ীর মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুল, এ যেন প্রকৃতির হলুদে বিছানার চাদর

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ফসলের মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেঁয়ে গেছে। অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকেরা । এক সাথে ফোটা ফল গুলো রোদ ঝলমল আলোয় প্রকৃতির মাঝে অপরুপ সৌন্দর্যর শোভা ছড়াচ্ছে। আর তা দেখতে ভীড় করছেন প্রকৃতি প্রেমীরা ।

কৃষকরা আগে এসব জমিতে শুধু ইরি-বোরো এক ফসলী আবাদ করে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত রাখত। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এ অঞ্চলের কৃষকদেরও কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে।

তারা বিগত দু, যুগ ধরে ইরি-বোরো, আমন, টমেটো করোলা. লাউ, পটল, শীম, ভূট্টা, তরমুজ আবাদের পাশাপাশি সরিষার আবাদেও ঝুঁকেছে। তাই এখন সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ঢাকা গোদাগাড়ীর বিস্তীর্ণ মাঠ। গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ বিল, বাসুদেবপুরের বিল চড়াইয়ের যে দিকেই তাকাই হলুদ ফুলে চোখ ঝলসে উঠে। ফুলের সাথে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি গুঞ্জন কৃষককে মহিত করে তুলেছে। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত। মধু আরোহনকারীরা মধু আরহনে ব্যস্তসময় পার করছেন। শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার ফুল ফল দুলছে তো দুলছে সে সাথে দুলছে কৃষকের মন।
তাই তো তারা দিনের বেশী সময় সরিষার মাঠে সময় পার করছেন। এ বছর গোদাগাড়ীতে বাম্পার সরিষার ফলন আশা করছেন কৃষক।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শীত বাড়ার সাথে এসব সরিষা ক্ষেতে দেখা দিবে আরও ফুল । শীতের আমেজ বাড়ার সাথে বাড়ে সরিষার ফুলও । এ সময় প্রকৃতি সরিষার ফোটা ফুল ছড়ায় মুগ্ঘতা । দিগন্ত জোড়া হলুদ সরিষার ফসলের মাঠ। যতদুর চোঁখ যায় সরিষার ক্ষেত । অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে এক সাথে ফোটা সরিষার ফুল গুলো।
আর তা উপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন হলুদ গালিচা । ফোটা সরিষা ফুলে ভ্রমর মধু খুঁজে ফিরছে ফুলে ফুলে । মধুমাখা ক্ষণে, প্রকৃতির সনে, সুবাসে মশগুল, সরষে ফুল । বিকেলের বেলাতে, মৌমাছির খেলাতে,গুনগুন তুলে রব,চারিদিকে সৌরভ, কবির লেখা কবিতার মতোই অসাধারণ এ চিত্রপট ফুটে উঠেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বরেন্দ্রাঞ্চলের বিস্তির্ন মাঠে ।
মাঠ জুড়ে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে দুর দরান্ত থেকে আসছেন তরুণ তরুণী সহ নানা বয়সী মানুষ । মাঠের চার পাশ ঘুরে দৃষ্টি নন্দন এমন পরিবেশ কে ক্যামেরা ফ্রেমে বন্দি করতে ব্যস্ত দর্শনার্থীরা

কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ – ২০২২ অর্থবছরে এ উপজেলায় মৌসুমে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২শ’ ৪০ হেক্টর। লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল।

গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০২০ – ২০২১ অর্থবছরে ৭ হাজর ২শ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। বারি সরিষা-১৪ জাত ২ হাজার ৮শ ৪৫ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫ জাত ২ হাজার ৬শ ৯০হেক্টর, বারি সরিষা-১৭ জাত ২শ ৩৫ হেক্টর, এছাড়া বিনা সরিষা সহ স্থানীয় কিছু জাত চাষ হয়েছে।

রাজশাহী জেলার উপ-পরিচালক মোঃ মোজদার হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা এক ইঞ্চি জমি ফাঁকা ( পতিত) রাখা যাবে না। এ ঘোষনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য,স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষিক্ষেত্রে বিভন্ন কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে আজ পর্যন্ত চাষে ও বিনা চাষে সরিষা বপন হয়েছে শুধু মাত্র গোদাগাড়ি উপজেলায় ১৯ হাজার ৫ শ ৪৩ হেক্টর। বিনা চাষে ৫ হাজার ১ শ ২৫ হেক্টর সরিষা চাষ হয়েছে। এখনও সরিষা বপন চলছে, আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত বপন চলবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তাগন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে কাজ করছেন, কৃষকদের পরামার্শ দিচ্ছেন। ইনসাল্লাহ সরিষার বাম্পার ফলন হবে।

এছাড়া প্রতি সরিষা জমি থেকে বাড়তি আয় করতে অনেক বেকার যুবক এবং কৃষকগণ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী সকল ধরনের কারিগরী সহযোগিতা করছে। কিছু কিছু জমিতে মধু আহরণের জন্য চাষীরা মধু সংগ্রহের বাক্স বসিয়েছেন। তেল বীজ, মধুর পাশাপাশি কৃষকরা সরিষা থেকে উন্নত গো-খাদ্যও তৈরী করতে পারবে বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে, বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। কার্তিক-অগ্রাহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা হয়। সরিষা চাষে সেচ ও সার লাগে কম। সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তেল নেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ গরুর খৈল হিসেবে খাওয়ানো হয়। এতে প্রচুর পুষ্টি থাকে। জ্বালানী হিসেবে সরিষার গাছ ব্যবহার করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার বিলপাতিকলা, দূর্গাদহ বিল, রেলগেট বিল, সুশাডাং, বোগদামারি, কালিদিঘি, পিরিজপুর, প্রেমতলী, সিধনা বিল, গ্রোগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বির্স্তীণ মাঠ সরিষার হলুদে ফুলে ছেঁয়ে গেছে। কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে তেলের চাহিদা মিটাতে গোদাগাড়ী কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি, সরিষা চাষে লাভবান হতে পারব।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার বলেন, সোয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে তেলের চাহিদা মিটাতে কৃষকদের সরিষা চাষে সচেতন করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সরিষা চাষে পরামার্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি বান্ধব সরকার তৈল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় মোট ১ হাজার ৬শ ৫০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। বিলের পানি নেমে যাওয়ার পর পরই সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সব সময় কৃষকের পাশে থাকতে নিরন্তর ছুটে চলতে ভালোবাসি।

গোদাগাড়ী এলাকার কৃষকরা জানান, কালের প্রেক্ষাপটে আমন ধানের বিকল্প হিসেবে গোদাগাড়ীতে কৃষকরা বোরো ধানের চাষে ঝুঁকে পড়ে। বিল চাড়ায়ের পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে মাঠের কৃষক কখনো সরিষার আবাদ করার কথা ভাবেনি। এখন থেকে ২০ বছর আগে এ বিলের কৃষক সমাজ ভাবতে পারেনি এ জমিতে সরিষা, মুসরি চাষ করার কথা। গত কয়েক বছর বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এবিলের মাঠে মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে পুরোদমে। বর্তমানে সরিষার গাছে গাছে হলুদ ফুলের সমাহার। প্রায় ফুলেই মৌমাছি বসে মধূ আহরণ করছে। কৃষক আশা করছে কোন রোগ বালাই না হলে এবার গোদাগাড়ীতে সরিষার বাম্পার ফলন হবে।

গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন জানান, এ বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ মণ হারে সরিষার ফলন হবে। একই গ্রামের শামসুল আলম জানান, সরিষার আবাদের পরই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। এতে জমিতে সার কম লাগে। সরিষার পাতা ও শিকড় সবুজ সারের কাজ করে এবং বোরো ধানের ফলনও বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অল্পসময়ের মধ্যে ২টি ফসল ঘরে তুলতে পারছে কৃষক।

ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলুদেব বলেন, বর্তমানে মাঠে সরিষার, ভুট্টা, বিনাচাষে রসুন, ধনিয়া, গমের আবাদ হয়েছে। সরিষার চাষে লাভ বেশী খরচ কম। তাছাড়া সহজেই বিক্রয় করা যায়। সরিষার আবাদ ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই সার ছাড়াই বোরো ধানের চাষ করা যায়। সরিষার আবাদ এ অঞ্চলের কৃষককে লাভের মুখ দেখাতে পেরেছে। সরিষার পাশাপাশি এবার ভুট্টার আবাদও হয়েছে ব্যাপক। মাত্র ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সরিষা জমি থেকে ঘরে তোলা যায়। সরিষার পাতা ও শিকড় জমিতে জৈব সারের কাজ করে। গাছগুলি জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সাথে কাজ করছেন। যাতে কৃষকের কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়। আমি আশা করছি, প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে এবার বিল চড়াইসহ গোদাগাড়ী সরিষা, গম, পিয়াজের রসুনের বাম্পার ফলনের আশায় স্থানীয় কৃষকদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD